Dr. Neem on Daraz
Victory Day

সরকার গণতন্ত্রকে ‘ধর্ষণ‍‍` করেছে: রিজভী


আগামী নিউজ | ডেস্ক রিপোর্ট প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০, ০৯:১৬ পিএম
সরকার গণতন্ত্রকে ‘ধর্ষণ‍‍` করেছে: রিজভী

ছবি সংগৃহীত

ঢাকাঃ গণতন্ত্রকে ধর্ষণ করেছে এই সরকার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেছেন, সিলেটের এমসি কলেজের নারীর সম্ভ্রম হরণকারী ছাত্রলীগ যদি অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে তাহলে এই সরকার প্রধান শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের সম্ভ্রম হরণ করেছে। গণতন্ত্রকে ধর্ষণ করেছে এই সরকার। তারা (ছাত্রলীগ) তাদের (মেয়েদের) ধর্ষণ করেছে আর সরকার গণতন্ত্রকে ধর্ষণ করেছে। কারণ গণতন্ত্র থাকলে তো জোরালো আওয়াজ হবে এই সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে। এই কারণেই গণতন্ত্রকে আস্তে আস্তে হরণ করেছে আর বিরোধী দলের গলা চেপে ধরেছে।

আজ রবিবার (২৭ সেপ্টম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠন (জিসাস) এর ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশে বিপথগামী ও পৈশাচিক সমাজ তৈরি করেছে  মন্তব্য করে রিজভী বলেন,' সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্রসফায়ার দিয়ে মানুষ হত্যা করছে। প্রতিমাসে দুজন একজন বিএনপির নেতাকর্মীও আছেন। কিন্তু তাদের রক্তবিন্দু থেকেই জাতীয়তাবাদীদের জন্ম হয়। সরকার আমাদের অনেক লোককে গুম করে ফেলেছে। কিন্তু তবুও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভারত কে যা দিয়েছি তা তারা কোনদিন ভুলতে পারবে না। কিন্তু তিনি কী দিয়েছেন তা খোলাসা করে বলেননি। আর দেশের জনগণকে আপনি কি দিয়েছেন? দিয়েছেন আতঙ্ক আর ভয়।গুম ক্রসফায়ারের ভয় এখন সবচেয়ে বড় ভয় হচ্ছে মা বোনেরা তাদের সম্ভ্রম নিয়ে ঘরে থাকতে পারবেন কি না।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ভালো করছেন ভালো কথা। কিন্তু দেশের মানুষের সাথে সম্পর্ক ভালো করছেন না। দিন দিন দেশের জনগণকে অন্ধকার অথৈ জলে ডুবিয়ে দিচ্ছেন। আপনার দলের সাধারন সম্পাদক খুব বড় বড় কথা বলেন যে অপরাধীদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আপনি যদি কঠোর অবস্থান নিতেন তাহলে এমসি কলেজের প্রধান ফটক থেকে নবদম্পতিকে ধরে নিয়ে ছাত্রাবাসের রুমে নিয়ে স্বামীকে আটক রেখে স্ত্রীর ওপর নির্যাতন করতেন না।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশির সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করছেন। কিন্তু দেশের নাগরিকরা নিজ বাসায় অনিরাপদ। প্রকাশ্যে নারীর সম্ভ্রমহানী হয়। ছাত্রলীগ সিলেটের এমসি কলেজে নারী লাঞ্ছনা করেছে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ভারতকে নিয়ে ফেসবুকে লেখার কারণে বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার নেই। বরং হত্যাকারীদের জেলখানায় পরীক্ষার খাতা সরবরাহ করা হচ্ছে। তারা বহু ছাত্র হত্যা করছে। ছাত্রদল না পেলে নিজেরা নিজেরা মারামারি কোপাকুপি করে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দেশে নষ্ট প্রজন্ম, পৈশাচিক সম্প্রদায় তথা বিপথগামী সমাজ তৈরি করেছে সরকার। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে? কিন্তু তাদের দ্বারাই তো এসব হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এসব হচ্ছে।

অনাচার কারা পৃষ্ঠপোষকতা দেয়। কারা দেয়? এই সরকার, ওবায়দুল কাদের তাদের যিনি প্রধান শেখ হাসিনা তিনি দিচ্ছেন সমস্ত পৃষ্ঠপোষকতা। তাদের পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই আজকে এই বেপরোয়া ভয়ঙ্কর সমাজবিরোধী দুর্বৃত্ত পরিণত হয়েছে ছাত্রলীগ।

রিজভী প্রশ্ন রেখে বলেন, ধর্ষিতা নারীর কান্না কি প্রধানমন্ত্রী ও ওবায়দুল কাদেরের কানে যায় না? তারা কি ক্রসফায়ারে মারা যাওয়া স্বজনদের কান্না শোনেন না। আমাদের দলের নেতা ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হীরু, পারভেজ, সুমন সহ বহু নেতাকর্মী অদৃশ্য।

তিনি আরো বলেন, সরকারের অপকর্মের বিরুদ্ধে বিএনপি ও ছাত্রদল যাতে কোনো কর্মসূচি করতে না পারে সেজন্য লাঠি সোটা রাম দা নিয়ে হামলে পড়ে তারা। আজকে জ্ঞান বিতরণ ও বিচ্ছুরণের প্রতিষ্ঠান হয়ে যাচ্ছে কসাইখানা ও নারী লাঞ্ছনার কেন্দ্র। আসলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশন সবকিছুই সরকারের বশংবদ।

রিজভী বলেন, পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির এজেন্ট ঢুকতে দেয়নি। এতো খারাপ লোক নির্বাচন কমিশনে আসেনি।

তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, এমসি কলেজের ঘটনায় তো দৃষ্টান্ত করতে পারতো একঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করে। আসলে যারা বারো বছর অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা করে তারা তো ভালো কাজ করবেনা। বর্তমানে সমাজবিরোধী দুর্বৃত্তে পরিণত হয়েছে ছাত্রলীগ।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, টেলিভিশন ও মিডিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডারেদর অবমাননা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বিদ্বেষ রয়ে গেছে। কেনো তার বাবা স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি? সেজন্য এই বিদ্বেষ। একথা তো ধ্রুবতারার মতো সত্য যে, আওয়ামী লীগের জন্মদাতা তো জিয়াউর রহমান।

তিনি বলেন, আজকে মিডিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচার করতে দেয়না। কারেন্ট সরকার শব্দকে ভয় পায়। তারা আওয়াজকে ভয় পায়। মানুষের বাক স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে গণতন্ত্র ধর্ষণ করেছে সরকার। তারা বিরোধী দল নিশ্চিহ্ন করতে চায়। এখন নতুনরূপে বাকশাল কায়েম করে ফেলেছে।

রিজভী বলেন, সম্প্রতি ইনডেমনিটি নামে চটি বস্তাপচা নাটক তৈরির মাধ্যমে যারা শহীদ জিয়াকে খাটো করার চেষ্টা করছে তারা জনগণের কাছে কালো তালিকাভুক্ত হয়ে থাকবে। জনগণ তাদেরকে ও সরকারের প্রতি ধিক্কার জানাচ্ছে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন জনগণের ক্ষোভের আগুন উৎসারিত হলে সরকারের সকল অনাচার ও পাপ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনারা একটা সম্প্রদায় একটা বিপথগামী সংগঠন তৈরি করেছেন আর তারা হল ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। কিভাবে তৈরি হয়েছে এই ওবায়দুল কাদেরের দ্বারা। এই সরকারের দ্বারা। তারা যদি প্রথম থেকেই কঠোর অবস্থান নিত তাহলে আজকে এমসি কলেজের ছাত্ররা এত বড় অপরাধ করতে পারত না।

আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান নাহিদ গুলনার ইভা সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুল সালাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিমউদ্দিন আলম, সাংস্কৃতিক ঐক্যজোটের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, কৃষক দলের সদস্য লায়ন মিয়া মোহাম্মদ আনোয়ার, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন প্রমুখ।

আগামীনিউজ/জেহিন

আগামী নিউজ এর সংবাদ সবার আগে পেতে Follow Or Like করুন আগামী নিউজ এর ফেইসবুক পেজ এ , আগামী নিউজ এর টুইটার এবং সাবস্ক্রাইব করুন আগামী নিউজ ইউটিউব চ্যানেলে